December 23, 2024, 7:20 am

সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যৌনপেশা

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Wednesday, January 27, 2021,
  • 236 Time View

রাজধানী মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন এক নারী। করোনায় লকডাউনের সময় অন্যদের মতো চাকরি হারান তিনিও। চাকরি হারিয়ে এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়েন। স্বামী ছেড়ে যাওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন।

সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পরিচিত এক নারীর মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর তখন থেকে শুরু হয় দিন-রাত রৌদ্র, বৃষ্টি ও তীব্র শীতে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খদ্দর খোঁজা। রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে সঙ্গে তার জীবনের গল্প বলেছিলেন ৩৫ বয়সের সুমাইয়া আক্তার (ছদ্মনাম)।

সুমাইয়া আক্তার জানান, অল্প বয়সেই তিনি মাকে হারান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে সইতে হয় সৎ মায়ের গঞ্জনা। মাত্র ১২ বছর বয়সে আমার চেয়ে দিগুণ বয়সী এক বাসচালকের সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। কিছুদিন সংসার ভালো চললেও আমাকে ছেড়ে স্বামী অন্য জায়গায় বিয়ে করেন। এরই মাঝে আমাদের সংসারে আসে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। এখন তাদের নিয়ে আমার সংসার।

তিনি জানান, যখন পেটে ভাত ছিল না- তখন সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি একা হলে হয়তো কষ্ট করে চলতে পারতাম। দিনশেষে আমার দুইজন সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে হয়। আমার ছেলে (৪) ঢাকার একটি নূরানি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। মেয়ে ৯ একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

তাদের পড়ালেখার খরচ আমাকে বহন করতে হয়। আমি চাইলে- আরেকটি বিয়ে করতে পারতাম, আমার বাচ্চাদের জন্য সেটা করিনি। কারণ আমি চলে গেলে তাদের আর কেউ থাকবে না। আমি তাদের আমার মতো এতিম করতে চাইনি। আমার জীবনটা কষ্টের হলেও সন্তানদের সেটা কখনোই বুঝতে দেয় না।

তিনি অভিযোগ করেন, যখন রাস্তায় দাঁড়ায় তখন পথচারী থেকে শুরু করে অনেকেই নানা মন্তব্য করে। পুলিশে এসে দৌঁড়ানি দেয়। প্রথম দিকে খারাপ লাগলেও এখন সব কিছু সহ্য হয়ে গেছে। সব কিছুতে কান দিলে সন্তানদের মানুষ করতে পারবো না। মাঝে মধ্যে কিছুকিছু খদ্দের খারাপ আচরণ করে, নেশা করে গায়ে হাত তোলে। একজনের কথা বলে দুই-তিনজন কাজ করতে আসে। কিছু বলতে গেলেই অত্যাচার করে, গালিগালাজ করে। মুখ বুঝে সব সহ্য করতে হয়। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তার।

সুমাইয়া আক্তারের আক্ষেপ, আমরা রাস্তায় কাজ করি, খদ্দরও কম, টাকাও কম। ৩০০ টাকা উপার্জন করলে ২০০ টাকা হোটেল বিল আর দালারাই নিয়ে যায়। আমাদের আর কি থাকে? আর যদি কখনো সারারাতের ডাক আসে তখন ১ হাজার টাকা উপার্জন করলেই ৬০০ টাকা হোটেলের দালালরা রেখে দেয়। প্রতিদিন তো আর খদ্দর জোটে না।

একদিন পর, দুইদিন পর আবার দেখা গেছে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত খদ্দের পাওয়া যায় না। এছাড়া বয়স হয়ে গেলে এ পেশায় খদ্দের পাওয়া যায় না। অল্প বয়সের মেয়েরা দেখতে সুন্দর হলে তাদের উপার্জন বেশি হয়।

এ পেশায় তার দীর্ঘদিন থাকার ইচ্ছে নেই। অন্য কোনো কাজের সুযোগ পেলেই তিনি এ পেশা ছেড়ে দিবেন। পেটের দায়ে এই ঘৃণিত পেশায় আসলেই সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে চান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71